অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ঘনরাম চক্রবর্তী ।ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বাধিক প্রচারিত কবি ঘনরাম চক্রবর্তী।বর্ধমান জেলার দামোদর নদের তীরে কৃষ্মপুর
অষ্টাদশ শতাব্দীর ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বাধিক প্রচারিত কবি ঘনরাম চক্রবর্তী
ঘনরাম চক্রবর্তী
অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ঘনরাম চক্রবর্তী ।ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বাধিক প্রচারিত কবি ঘনরাম চক্রবর্তী।বর্ধমান জেলার দামোদর নদের তীরে কৃষ্মপুর গ্রামে ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম।পিতা গৌরীকান্ত, মাতা সীতাদেবী।ধর্মমঙ্গল রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও দক্ষ কবি ছিলেন ঘনরাম চক্রবর্তী।১৭১১ খ্রিস্টাব্দে ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেন ।ঘনরামের অন্য গ্রন্থের নাম সত্যনারায়ণ পাঁচালি'। তাঁর রচনার বিশেষ গুণপ্রসন্নতা ও ভদ্ররূচি। তাঁর রচনাকৌশলের জন্য পাঠক তাঁর লেখার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ বোধ করে।ঘনরাম তাঁর কাব্যের ভণিতায় তাঁর কাব্যকে 'শ্রীধর্মসংগীত', 'অনাদিমঙ্গল', 'মধুর ভারতী' প্রভৃতি নামে অভিধাযুক্ত করেছেন।
ঘনরাম মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। অষ্টাদশ শতাব্দীর অবক্ষয় সাহিত্যাদর্শের স্থলে তিনি এক বলিষ্ঠ প্রাণবান সতেজ ও নৈতিকতায় পরিশুদ্ধ উন্নত চরিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর কাব্যে। যদিও সাহিত্য-শিল্পের বিচারে তাঁর পাঁচালি প্রধান কারা তেমন কিছু মহৎ সৃষ্টি নয়— তবুও সমকালীন মঙ্গলকাব্যের নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে বিচিত্র কল্পনার বর্ণ সমাবেশে জীবনাদর্শগত উচ্চকোটির ভাবকল্পনায় তিনি এক উল্লেখযোগ্য কবি। কবির লক্ষ্য ছিল, অষ্টাদশ শতাব্দীর নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে যথাসম্ভব চরিত্রের সজীবতা রক্ষা করে জাতির চরিত্র গঠনের জন্য একটা প্রাণবান বলিষ্ঠ ও নৈতিক ধর্মে উন্নত পবিত্র শৌর্যবীর্যের আদর্শ তুলে ধরা। কবি বীরত্ব, মনুষ্যত্ব ও নারীত্বের উচ্চ আদর্শ ঘোষণা করেছেন।
লাউসেন ধর্মের প্রভাবপুষ্ট। এই দৈবানুকূল্যের কথা বাদ দিলে এই চরিত্রটি মানবিক গুণে বৈশিষ্ট্যদ্যোতক। পিতামাতার প্রতি ভক্তি, ধর্মীয় প্রথানুসরণ, নির্ভীকতা ও অসামান্য বীরত্বের জাজ্জ্বল্য মূর্তি লাউসেন।
ঘনরাম চক্রবর্তীর 'রঞ্জাবতী' চরিত্র :-
সস্তানবৎসল মাতৃহৃদয়ের শাশ্বত-রমণীয় রূপটি ঘনরামের কাব্যে বিশিষ্টরূপে রঞ্জাবতী চরিত্রটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। রঞ্জাবতী স্বর্গের শাপভ্রষ্ট নর্তকী হলেও স্নেহময়ী, সর্বদা পুত্রচিন্তায় অধীর
ধর্মমঙ্গল কাব্যের অপ্রধান চরিত্র :-
প্রধান চরিত্রগুলি কমবেশি দেবপ্রভাব যুক্ত—তাই অনেক ক্ষেত্রে অনৈসর্গিক ঘটনা স্থান পাওয়ায় তাঁদের স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কিন্তু অপ্রধান চরিত্রগুলি খুবই জীবন্ত, বাস্তবনিষ্ঠ ও স্বকীয় মহিমায় দীপ্ত। পাতিব্রতা ও স্নেহশীলতা, দুর্জয় সাহস ও অবিচলিত কর্তব্যবোধ অপ্রধান চরিত্রগুলিকে যথোচিত চরিত্রধর্মে অসামান্য মর্যাদায় ভূষিত করেছে। এসব চরিত্রসৃষ্টিতে বাস্তব জীবনের সামাজিক পটভূমি গড়ে উঠার সুযোগ এসে গেছে।
ঘনরামের কাব্যের একটি খলচরিত্রের পরিচয় :-
ভিলেন বা খলচরিত্র হিসেবে মহামদ চরিত্রটি ঘনরামের অনবদ্য সৃষ্টি। শঠতা, ক্রুরতা ও পরায়ণতায় মহামদ খুবই স্বাভাবিক ও জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
ঘনরামের কাব্যের দুটি অভিনবত্ব :-
প্রথমত:- ঘনবামের কাব্যই প্রথমে মুদ্রণ সৌভাগ্য লাভ করে।
দ্বিতীয়ত:- ঘনরামই মঙ্গলকাব্যধারার একমাত্র কবি যিনি কাব্য রচনায় স্বপ্নাদেশের কোনো উল্লেখ করেননি।
ঘনরাম চক্রবর্তীর কাব্যের বিশিষ্টতা :-
কবিত্ব ও পান্ডিত্যের অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে ঘনরামের কাব্যে। গ্রাম্য স্থূলতা ও কুরুচি থেকে তাঁর কাব্য মুক্ত, স্বচ্ছন্দ, সাবলীল ও পরিশীলিত। তিনিই প্রথম পৌরাণিক বিদ্যাবত্তা বা পাণ্ডিত্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণশক্তি ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি বিভিন্ন চরিত্রগুলিকে ব্যক্তিবৈশিষ্ট্যে স্পক্টোজ্জ্বল করে তুলেছে।হিন্দুর শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করেন।
COMMENTS